লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা

লাল শাকের উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক বেশি । তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে হবে লাল শাক। কিন্তু কেন খাবেন এই লাল ? এই প্রশ্নের উত্তরটি জানানোর জন্য আজকের এই পোস্ট। এই পোস্টের মাধ্যমে লাল শাকের পুষ্টিগুণ , লাল শাকের উপকারিতা এবং লাল সাথে কি ভিটামিন আছে এই সকল বিষয়গুলো আপনাদের জানাবো।

আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রিয় শাকের তালিকায় লাল শাকের নাম রয়েছে শীর্ষে । শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় এর উপকারী দিক রয়েছে অনেক তবে উপকারী দিকের পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতাও রয়েছে। তাই লাল শাক খাওয়া তুলতেই অবশ্যই আপনাদের জেনে নেওয়া উচিত লাল শাকের উপকারিতা এবং লাল শাকের উপকারিতা সম্পর্কে। আর এই বিষয়ে জানতে করতে পারেন আজকের এই পোস্টটি কেননা আজকের এই পোস্টটি আমরা আলোচনা করব লাল শাক বিষয়ে । আজকের পোস্টে থাকছে লাল শাকের উপকারিতা এবং লাল শাকে কি ভিটামিন আছে এই বিষয়ে দুটি ছাড়াও আপনাদের জানাবো লাল শাকের ইংরেজি নাম , লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম , লাল শাকের পুষ্টিগুণ এবং লাল শাকের অপকারিতা সম্পর্কে।

সূচিপত্রঃ লাল শাকের উপকারিতা - লাল শাকে কি ভিটামিন আছে

লালশাকের পুষ্টিগুণ

লাল শাকের কথা আপনারা সকলেই জানেন , এই চারটি হল বিশেষ পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ শাকগুলোর মধ্যে একটি। এই লাল সাকের ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ। লালশাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানে না যে লাল শাকের ভেতর থেকে কোন কোন পুষ্টিগুণ গুলো আমরা পেয়ে থাকি। তাই এখন আপনাদেরকে লালশাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানাবো। প্রতি 100 গ্রাম লাল শাকের ভেতরে রয়েছে প্রায় ,
খনিজ পদার্থ - ১.৬ গ্রাম
কিলোক্যালরি - ৪৩ গ্রাম
আমিষ - ৫.৩ মিলিগ্রাম
চর্বি - ০.১৪ মিলিগ্রাম
শর্করা - ৫ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৩৭৩ মিলিগ্রাম
ক্যারোটিন - ১১৯২০ মাইক্রগ্রাম
ভিটামিন বি১ - ০.১০ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি2 - ০.১৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি - ৪৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
এছাড়াও লাল শাকের পুষ্টিগুণের মধ্যে রয়েছে লৌহ , ম্যাগনেসিয়াম , পটাশিয়াম ,দস্তা , ফসফরাস

লাল শাকের ইংরেজি নাম

আমাদের বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই লাল শাক হয়ে থাকে এবং আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন লাল শাকের ইংরেজি নাম।তাই এবার আপনাদের জানাবো লালশাক কে ইংরেজিতে কি বলা হয় বা লাল শাকের ইংরেজি নাম। লাল শাকের ইংরেজি নাম হলো - Red amaranth

লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম

এবার আপনাদের জানাবো ,লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম। কারণ যারা লাল শাকের বীজ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা বা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন তাদের অনেক সময় লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম জানার দরকার পড়ে , আর তাদের কথা চিন্তা করে আজকে আপনাদেরকে জানাবো লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম কি। লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম হল Amaranthus oleraceus .

লাল শাকে কি ভিটামিন আছে

লাল শাকে কি ভিটামিন আছে এই প্রশ্নটি অনেকেই আলাদাভাবে জানতে চেয়ে থাকেন ।লাল শাকে কি ভিটামিন আছে এই সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। তাই এখনলাল শাকে কি ভিটামিন আছে এই প্রশ্নের উত্তরটি আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি লাল শাকে রয়েছে

ভিটামিন বি১
ভিটামিন বি ২
ভিটামিন এ
ভিটামিন সি এবং
ভিটামিন কে

লাল শাকের উপকারিতা

জানেন কি লাল শাক কেন খাবেন বা লাল শাক খাওয়া আমাদের জন্য জরুরী কেন। লাল শাকের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও লাল শাকের উপকারিতা রয়েছে আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আজকে আপনাদের লাল শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো , কারণ অনেকেই লাল শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানেন না। তাহলে আর দেরি না করে চলুন বিস্তারিতভাবে লাল শাকের উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক,
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ পোস্টের ওপরের অংশে লাল শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানার সময় আপনারা জেনেছেন লাল শাকের মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায় লাল শাক খেলে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দূর হয় আর যেহেতু শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকে না তাই এই শাক খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ শাক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ একটি খাবার কেননা লাল রয়েছে ফাইবার যা হজমের সহায়তা করে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করে। আর যেহেতু রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ লাল সাগরের ভেতরের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি থাকায় এটি আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতেও বিশেষ সাহায্য করে থাকে। লাল শাক রাতকানা রোগ দূর করার পাশাপাশি চোখের রেটিনা ভালো রাখে আর এই কারণেই খাদ্য তালিকায় লাল শাক রাখলে তা আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে কাজ করবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ লাল শাকের ভেতরে বিভিন্ন পুষ্টিগুণের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট ও পাওয়া যায় আর এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্যান্সারের তেল ড্যামেজ করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের সেল জন্মাতে বাধা দেয়।
কিডনি ভালো রাখেঃ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় লাল শাক রাখলে এর ভেতরে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো কিডনি ভালো রাখে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিডনি পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন টক্সিক উপাদান গুলো বের করে দিতেও সাহায্য করে।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ শুধু কিডনি নয় লাল শাক আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও ভূমিকা পালন করতে পারে । লাল শাকের ভেতরে থাকা বিটা ক্যারোটিন হার্টের রোগ থেকে দূরে রাখে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
হাঁড় ভালো রাখেঃ লাল শাকের ভেতরে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি আমাদের হাঁড় ভালো রাখে।তাই হাঁড় মজবুত এবং ভালো রাখতে আজ থেকেই খাদ্য তালিকায় নিয়মিতভাবে লাল শাক রাখার চেষ্টা করুন।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ লাল শাক ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও সাহায্য করে কারণ লাল শাকের ভেতরে রয়েছে ফাইটোস্টিরল নামের এক ধরনের উপাদান , আর এই উপাদান কি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদেরকে সপ্তাহে অন্তত দুই তিন দিন লাল শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
রক্তশূন্যতা দূর করেঃ প্রতি বছরই বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ এই রক্তশূন্যতা নামক রোগে আক্রান্ত হয় কিন্তু আপনি শুনলে অবাক হবেন যে লাল শাকের ভেতরে থাকা পুষ্টিগুণগুলো অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা রোগ দূর করতেও সাহায্য করে। অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা রোগের প্রধান একটি কারণ হলো আয়রনের ঘাটতি আর লাল শাকের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় শরীরে আয়রনের চাহিদা পূরণ হয় এবং যার ফলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ লাল শাকের ভিতরে রয়েছে ফাইবার এই ফাইবার এবং অল্প পরিমাণে ক্যালরি তাই লাল শাক এর বিভিন্ন উপকারিতার পাশাপাশি আরেকটি উপকার হলো এই সাত আমাদের ওজন কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ আপনারা আগেও জেনেছেন লালশাকের ভিতরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এই ফাইবার থাকার কারণে হজমের ক্ষেত্রে এই চাকরি খুবই উপকারী কারণ ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারীঃ শরীরের অন্যান্য রোগ দূর করার পাশাপাশি একটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য আদর্শ খাবার কেননা এই খাবারটি খেলে শরীরে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় , কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় , ক্যালসিয়াম আয়রনের ঘাটতি দূর হয় যা গর্ভাবস্থায় খুবই জরুরী।
চুল ভালো রাখঃ সপ্তাহে কয়েকদিন যদি নিয়মিত লালশা খাদ্য তালিকায় যুক্ত করা যায় তাহলে এই শাক আমাদের চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে। লাল শাক খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল পড়ার সমস্যা কম হয় , চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি পায় এবং কি স্বাস্থ্য উজ্জ্বল হয়।

লাল শাকের অপকারিতা

এবার আপনাদেরকে লাল শাকের অপকারিতা বা অপকারী কিছু দিক সম্পর্কে জানাবো। অনেক ধরনের উপকারিতা থাকলেও লাল শাকের অপকারিতা রয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে যেমন - লাল শাকের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে আইরন থাকায় যদি অতিরিক্ত এই শাক খাওয়া হয় তাহলে শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে দেখা দিতে পারে অনিদ্রার সমস্যা। আবার চাঁদের হাটের সমস্যা এবং লিভারের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আইরনযুক্ত খাবার গুলো ক্ষতি করতে পারে বিশেষ করে রাত্রেবেলা এই জাতীয় রোগীদের আয়রন জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো তাই হার্ট বা লিভারের রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লাল শাক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আপনারা জানেন লাল সাথে ফাইবারের পরিমাণও রয়েছে প্রচুর কিন্তু প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় তাহলে হজমের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও গর্ব অবস্থায় লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা থাকলেও যদি গর্ভবতী নারীরা এই শাক সহজে হজম করতে না পারে তাহলে লাল শাক তাদের জন্য এভোয়েড করাই ভালো কারণ এর থেকে এসিডিটি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
মন্তব্য , আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে আপনারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই লাল শাকের উপকারিতা এবং লাল শাকে কি ভিটামিন আছে । লালশাক যেহেতু শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি শাক এবং এই শাক আমাদের দেশের প্রায় সকল জেলাতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে হয়ে থাকে এবং সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় তাই চেষ্টা করুন সপ্তাহে অন্ততপক্ষে ২-৩ দিন খাদ্য তালিকায় লাল শাক যুক্ত করতে। তবে হ্যাঁ কিছু ক্ষেত্রে লাল শাকের অপকারিতা রয়েছে সে সকল বিষয়গুলোর অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url