কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা - গাজরে কোন ভিটামিন থাকে

গাজর এমন একটি সবজি যে সবজিটিকে আমরা ছোট থেকে বড় সবাই চিনি। এই সবজিটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কালারফুল রেসিপি এবং মুখরোচক বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। কিন্তু শুধু যে খাবার কে আকর্ষণীয় করার ক্ষেত্রে এর অবদান রয়েছে এ বিষয়টি এমন নয় , গাজরের ভেতরে এমন সব উপাদান রয়েছে যেগুলো আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।

গাজরের ভিতরে থাকা ভিটামিন সহ বিভিন্ন উপাদান গুলো আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী , গাজোল নামক এই একটি সবজির মধ্যে থেকেই যেহেতু অনেক ধরনের খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন একসাথে পাওয়া যায় তাই গাজরকে সুপার ফুড বললেও ভুল হবে না। কিন্তু এই গাজরের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা , তাই চলুন আজকে গাজর সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অজানা তথ্যগুলো জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা - গাজরে কোন ভিটামিন থাকে

গাজরে কোন ভিটামিন থাকে

একাধিক গবেষণার ফলাফল হিসেবে দেখা গিয়েছে যে গাজরে প্রধানত ৩টি ভিটামিন রয়েছে , আর এই ভিটামিন ৩ টি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। গাজর থেকে যেই ভিটামিন গুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় , সেগুলো হল

  • ভিটামিন এ 
  • ভিটামিন সি এবং
  • ভিটামিন বি 6

তবে গাজরের ভেতরে এ ৩টি ভিটামিন ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে ,যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল - অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , বিটা ক্যারোটিন  ,ফলেট , ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ , জিংক , পটাশিয়াম ও মিনারেল।

কাঁচা গাজর খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা গাজর -

ডাইজেস্টিভ সিস্টেম উন্নত করেঃ কাঁচা গাজর আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম কি উন্নত করতে সাহায্য করে কেননা এই কাঁচা গাজর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায় যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে ভালো রাখে অর্থাৎ ডাইজেস্টিক সিস্টেম উন্নত করে।

হার্ট ভালো রাখেঃ আপনারা হয়তো অনেকে জেনে থাকবেন যে কাঁচা গাজরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম হওয়া চাই এবং গাজর হল পটাশিয়ামের মধ্যে বড় উৎসগুলোর মধ্যে একটি। গাজরে থাকা এই পটাশিয়াম আমাদের হার্টের কার্যকরিতা বাড়াতে এবং হার্ড ভালো রাখতেও অত্যন্ত সাহায্য করে। এছাড়া আমেরিকান হার্ট অ্যাাসোসিয়েশন জার্নাল 

ব্রেন অ্যাক্টিভ রাখেঃ গাজরের ভেতরে থাকা উপাদান গুলো আমাদের ব্রেনকে একটিভ রাখতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কে কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য কাঁচা গাজরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিটা ক্যারোটন নামক উপাদান দুটি খুব ভূমিকা পালন করে থাকে

স্ট্রেস ও প্রদাহ দূর করেঃ কাঁচা গাজর খেলে কিন্তু শরীরের যেকোন প্রদাহ দূর করতে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে কেননা কাঁচা গাজর থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , যা আমাদের হার্ট ভালো রাখার পাশাপাশি প্রদাহ ও স্ট্রেস কমাতেও বিশেষভাবে সাহায্যকারী।

লিভার ভালো থাকেঃ নিয়মিত কাঁচা গাজরের রস খেলে লিভারের টক্সিসিটি দূর করে। আর এ কারণে কাঁচা গাজর লিভার ভালো রাখতে এবং লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটা ক্যারোটির নামও উপাদানটি গাজরের ভেতরে মজুদ থাকায় নিয়মিত কাঁচা গাজর খেলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখার পাশাপাশি , গাজর রাতকানা রোগ থেকেও দূরে ডাকে কেননা গাজরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ।

ইমিউনিটি বৃদ্ধি করেঃ কাঁচা গাজর আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে , যার ফলে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। শুধু তাই নয় কাঁচা গাজরে থাকা উপাদান গুলো আমাদের শরীরে প্রবাহ বিরোধী , এন্টিভাইরাস হিসেবেও অভ্যন্তরীণভাবে কাজ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ কাঁচা গাজর খাওয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো এটি আমাদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও বিশেষভাবে সাহায্যকারী। যারা ডায়াবেটিসের রোগী আছে তারা যদি নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে কাঁচা গাজর বা গাজরের রস পান করে তাহলে খুব সহজেই তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ কাঁচা গাজর আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে , কাঁচা গাজর খেলে ফ্যাট বার্ন করা যায় খুব সহজেই এবং যেহেতু গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের মাত্রা খুবই কম থাকে তাই ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার চিন্তা থাকে না। তাই যারা নিজেদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তারা সঠিক ডায়েট এবং এক্সারসাইজের পাশাপাশি গাজর খেলে  , শরীরের ওজন দ্রুত কমাতে পারবেন।

হাড় ও দাঁত মজবুত করেঃ কাঁচা গাজর খেলে এর ভেতরে থাকা উপাদান হলো আমাদের শরীরের হাড় এবং দাঁত মজবুত করতে ও দাঁত ও হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। গাজরের ভেতরে থাকা উপাদানগুলো দাঁতের গোড়াতে ক্যালকুলাস জমতে দেয় না এবং হাড়ের বিভিন্ন রোগ যেমন অস্টিওপোরোসিস , আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি সমস্যাগুলো থেকে দূরে রাখে।ক

রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করেঃ কাঁচা গাজর খেলে এর থেকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে।

হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখেঃ নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে কাঁচা গাজর। কাঁচা গাজর যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং শুক্রাণু সংখা বাড়াতেও কাজ করে।

স্কিন ভালো রাখেঃ শুধু শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নয় স্কিন ভালো রাখার ক্ষেত্রেও , বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে গাজর। সান বার্ন , ত্বকের কালো দাগ , ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর করতে , অয়েলি স্কিনের সমস্যা দূর করা সহজ ইত্যাদি সহ তবে বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে ও স্কিন সেল ড্যামেজ রোধ করতে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে কাঁচা গাজর খান।

প্রতিদিন কতটুকু গাজর খাওয়া উচিত

আপনারা অনেকেই গাজর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে মোটামুটি জানলেও , মানুষের বেশিরভাগ মানুষই এ বিষয়ে অবগত নয় যে প্রতিদিন ঠিক কি পরিমান গাজর খাওয়া উচিত। গাজর খাওয়ার সঠিক পরিমাণ না জানা থাকার কারণে , অনেকেই হয়তো উপকারিত ভেবে বেশি খেয়ে ফেলেন যার ফলে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার । তাই এবার চলুন , প্রতিদিন কি পরিমান গাজর খাওয়া শরীরের জন্য জন্য উপকার তা জেনে নেয়া যাক।

প্রায় 16700 IU ভিটামিন A মজুদ থাকে ১০০ গ্রাম কাঁচা গাজরের ভিতরে। ভিটামিন এ ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে গাজরের ভেতরে পাওয়া যায় , বিভিন্ন গবেষণা করে দেখা যায় যে প্রতিদিন প্রায় ৫০ গ্রাম গাজর শরীরের জন্য উপকারী। অর্থাৎ মাঝারি সাইজের ১-২ গাজর খাওয়া যেতে পারে, শরীর সুস্থ রাখার জন্য।

গাজরের অপকারিতা

গাজরের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকার কারণে এটি যেমন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী , ঠিক তেমনি মাত্রা অতিরিক্ত খেলে শরীরের জন্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ধরুন -আপনি যদি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে গাজর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখেন তাহলে সে ক্ষেত্রে অনেক সময় ত্বকের রঙে হলুদ ভাব আসতে পারে, কারণ গাজরের ভেতরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। আর এই বিটা ক্যারোটিন মাত্রা শরীরে বেশি হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে শরীরে হলুদ ভাব দেখা দিতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীরা যদি বেশি পরিমাণে কাঁচা গাজর খায় তাহলে সে ক্ষেত্রে তাদের ডায়াবেটিস এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নাও থাকতে পারে , কারণ কাঁচা গাজরে ন্যাচারাল সুগার থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের কাঁচা গাজর না খেয়ে, পরিমাণ মতন সেদ্ধ গাজর খাওয়া উত্তম।

শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাত্রায় গাজর খেলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।এছাড়াও নির্দিষ্ট মাত্রার বাইরে গাজর খেলে এটি শরীরের ম্যাগনেসিয়াম , ক্যালসিয়াম , আয়রন সহ খনিজ উপাদান গুলোর শোষণে সৃষ্টি করতে পারে এবং হজমের ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে , যার ফলে দেখা দিতে পারে এসিডিটি এবং ডায়রিয়া।

মন্তব্য , আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণ উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝেই গেছেন , যে নির্দিষ্ট পরিমাণে যদি প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় গাজর রাখায় তাহলে এটি আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য কতটা অবদান রাখতে পারে। তবে অবশ্যই উপকারী বলেই অতিরিক্ত মাত্রায় এটি খাওয়া যাবে না কেননা এর ফলে শরীরে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন

comment url